Asim Deb Writings

বেইরুটের তিনরাত

বেইরুটের তিনরাত
অসীম দেব

সবে সপ্তাহ তিনেক হয়েছে অমিত আবু ধাবিতে এসেছে। যাদবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে পাঁচ বছর সে মুম্বাই পোর্ট ট্রাস্টে ছিলো। সম্প্রতি সে একটা ভালো সুযোগ পেয়ে নতুন চাকরি নিয়ে আবু ধাবিতে এসেছে। আছে এখানের মেকানিক্যাল ডিজাইন ডিপার্টমেন্টে। বেইরুট পোর্ট অথরিটির কিছু কাজ ওঁকে দেওয়া হয়েছে।

এই আবু ধাবিতে অমিতের পরিচিত কেউ নেই, শুধু হিমাচলের একটি পালোতে পরিবার ছাড়া। এখানে এসে প্রথমে এই পালোতে পরিবারেই উঠেছিলো। সপ্তাহ খানেক পরে নিজের ফ্ল্যাট ভাড়া করে চলে যায়। অমিতের উপরি পাওনা, সেই পরিবারেরই একটি মেয়ে অমিতের অফিসে এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারিয়াল কাজ করে, এবং অমিতেরই ডিপার্টমেন্টে। মেয়েটির নাম মধুমিতা, অফিসের সবাই ওঁকে মধু বলেই ডাকে।

মাসখানেক পরে এবার অমিতকে বেইরুটের পোর্ট অথরিটির প্রজেক্টে তিনদিনের জন্য সাইটে যেতে হবে। ম্যানজমেন্ট অমিতকে ব্রিফ করে দিয়েছে যে, কোম্পানি এখন বেইরুটের পোর্টের একটা বিরাট বড় এবং বিরাট অঙ্কের মডার্নাইজেশনের কাজ করছে। বেইরুট এবার হবে পুর্ব ভূমধ্যসাগরের সবথেকে বড় পোর্ট, হবে Sea Gateway of Middle East. ২০০,০০০ স্কোয়ার মিটার টার্মিনাল, থাকবে মডার্ন মিড সী মনিটরিং সিস্টেম আর কুইক রিপেয়ারিং স্টেশন। সুতরাং যে কোন সংস্থার পক্ষেই এই মডার্নাইজেশন প্রজেক্ট যতটা সন্মানের আর বিশাল অঙ্কের কাজ, ততটাই চ্যালেঞ্জের।

অন্যদিকে কর্তৃপক্ষ যেমন অমিতকে কাজের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে, তেমনি সাবধানও করে দিয়েছে যে, বেইরুটের একটি অন্য নামও আছে, “Cave of Ali Baba and the 40 Thieves”, কারণ এখানে দুর্নীতি এবং ঘুষ, অন্যান্য অপকর্ম সবই অবাধে চলে।

এর আগে মেরিন ডিজাইনের কাজ অমিত করেনি। তাই হঠাৎ করে এত বড় প্রজেক্টের ডিজাইনের দায়িত্ব ওঁকে দেওয়া হবে, এটা সে এত তাড়াতাড়ি আশা করে নি। স্বভাবতই একটু ইতস্তত করছিলো, আর মধুও সেটা খেয়াল করে।
– অমিত, হোয়াই ইউ আর সো টেন্সড? আই ক্যান সি দ্যাট।
মধু যে এটা খেয়াল করেছে, অমিত সেটা ধরতে পারেনি।
– হোয়াটস ইয়োর প্রবলেম অমিত?
– নট দ্যাট মধু। ইটস নট এ প্রবলেম, বাট দ্যা ফার্স্ট টাইম আই শ্যাল বি ডিজাইনিং এ মেরিন পোর্ট প্রজেক্টস।
– সো?
– হোয়াট সো?
– অমিত, জাস্ট আন্ডারস্ট্যান্ড, ম্যানেজমেন্ট নিউ দ্যাট ইউ আর নিউ ইন মেরিন পোর্ট ডিজাইনস, দে নিউ ইউ ডোন্ট হ্যাভ মেরিন ডিজাইন এক্সপিরিয়িএন্স, বাট দে গেভ ইউ দ্যা অফার। এম আই রাইট?
– দ্যাটস ট্রু মধু বাট
– নাথিং বাট। ডোন্ট স্পেন্ড ইয়োর টাইম ইন চাইল্ডিশ আরগুমেন্টস। জাস্ট গো আন্ড জাম্প ইন দ্যা ডিজাইন বিজনেস।

অমিতের এখানে মাত্র মাসখানেক হয়েছে। সত্যি কথা বলতে এই পালোতে পরিবারটি ছাড়া আর কারোর সাথে তাঁর বিশেষ পরিচয়ই হয়নি। তবে অমিতের পূর্বপরিচয় না থাকলেও দুই পরিবারের যোগাযোগের সূত্রে প্রবাসে পালোতে পরিবার অমিতের খেয়াল রাখে। ইদানিং মধু মেয়েটিকেও অমিতের ভালো লাগে। শিক্ষিত, মার্জিত, নিজস্ব ব্যাক্তিত্ব আছে, আর কর্মী হিসেবেও অফিসে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। দেখতেও যথেষ্টই সুন্দরী বলা চলে।

বেইরুট যাওয়ার আগের দিন বিকেলের দিকে মধু অমিতের ভিসা, ডলার, হোটেল বুকিং এর কাগজপত্র বুঝিয়ে দিলো। এরপরে জানতে চাইলো, “হ্যাভ ইউ টেকেন দ্যা অফিস পেপারস? অর ইউ ওয়ান্ট মাই হেল্প।“
– ওহ, নো। সো নাইস অফ ইউ মধু, আই হ্যাভ প্যাকড অল দ্যা পেপারস মাইসেলফ।
মধু তবু ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। একটু পরেই বললো, “অমিত, চলো, প্লিজ লেটস গো ফর এ কাপ অফ টি।“
অমিতের মনে হলো মধু বোধ হয় কিছু বলতে চায়, কিন্তু এখানে ডিজাইন হলে সকলের মাঝে বলতে পারছে না। নইলে এভাবে প্লিজ চলো কেন বলবে?

অফিসের ছোট্ট কাফেতে গিয়ে দুজনে চা নিয়ে বসলো। অমিত অপেক্ষা করছে, মধু কিছু বলবে। কিন্তু মধু চুপ করেই আছে।
– তুম কুছ বোলনা চাহতে হো, মধু?
মনে হয় বরফটা কিছুটা গললো। “হাঁ অমিত, বোলনা জরুরী হ্যায়, বাট আই ডোন্ট নো, ইফ দ্যাট উড বি ফেয়ার।“
অমিতের ভুরু খানিকটা কুঁচকে গেলো। কিছু নিশ্চয়ই আছে, যা বলতে মধুর সংকোচ হচ্ছে। গলার স্বর খানিক নিচু করে বললো, “ফ্রি হোকে বলো মধু, ইউ ক্যান ট্রাস্ট মি।“
তবু মধু চুপ করেই আছে, অথচ অমিত ঠিকই বুঝতে পারছে মধু যেন কিছু বলতে চায়।
– মধু, প্লিজ টেল মি নাউ, বিফোর এনি থার্ড পার্সন কামস।
মধু একটু এগিয়ে এলো, নীচু গলায় বললো, “অমিত, হোয়াট আই উড সে শুড রিমেইন সিক্রেট বিটুইন ইউ এন্ড মি। প্রমিস?’
– ইয়েস প্রমিস, ইউ ক্যান ট্রাস্ট মি।
– অমিত। ইউ আর ম্যাচিওর্ড, আই নো। বাট ইউ আর নিউ টু আবু ধাবি, এন্ড অলসো আই হ্যাভ চেকড ইয়োর পাসপোর্ট দ্যাট ইউ আর গোয়িং টু বেইরুট ফর দ্যা ফার্স্ট টাইম।
– ইয়েস, গোইং ফার্স্ট টাইম টু বেইরুট।
– অমিত প্লিজ টেক মাই এডভাইস। আই হ্যাভ এরেঞ্জড সিঙ্গল অকুপেন্সি রুম ফর ইউ। ফর গড সেক, ডোন্ট চেঞ্জ ইয়োর রুম, অর এলাও এনিবডি ইন ইয়োর রুম। এন্ড অলসো প্লিজ ডোন্ট গো টু এনি আদার রুম, এভেন ইফ ইউ আর ইনভাইটেড।
– শেয়ার মাই রুম উইথ এনিবডি? হোয়াই শ্যুড আই?
– ডোন্ট আস্ক মি ফার্দার, প্লিজ অমিত। প্লিজ গেট রেডি ফর দ্যা জার্নি।

অমিত চিন্তায় পড়ে গেলো। ওর সাথে আরও দুজন যাবে। একজন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার। হিমাই নাথারোভ। জর্জিয়ান, মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং করেছে। সুদর্শন, আন্দাজ বছর পয়ত্রিশ বয়স। এই অফিসে অনেকদিন আছে। আর যাবে একজন ভারতীয়, সংযম শাহ। গুজরাটি ছেলে। গুজরাটের আনন্দে বাড়ি। গত বছরেই ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে এখানে ট্রেনি হয়ে জয়েন করেছে। বয়স আন্দাজ একুশ বাইশ। অফিসে অমিত এঁদেরকে যতটুকু দেখেছে, ভালোই তো মনে হয়। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
– আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড মধু। হিমাই এন্ড সংযম আর গোয়িং উইথ মি। এনি প্রবলেম?
– প্লিজ, প্লিজ ডোন্ট আস্ক মি অমিত। মাই রিকুয়েস্ট। এন্ড অলসো প্লিজ জাস্ট রিমেমবার মাই এডভাইস। ইউ আর গোয়িং টু বেইরুট। আই হোপ ইউ শ্যুড বি এবল টু টেক কেয়ার অফ ইয়োরসেলফ।

অমিত চিন্তায় পড়ে গেলো। মধু আরও বললো,
– ডোন্ট বি আপসেট অমিত, অর নার্ভাস, অর টেন্সড। পয়েন্ট ওয়ান, ডোন্ট শেয়ার ইয়োর রুম, ডোন্ট গো ট্যু এনি আদার রুম, এন্ড পয়েন্ট ট্যু, টেক কেয়ার অফ ইয়োরসেলফ।

অমিত বুঝতে পারছে না, মধু এসব কেন বলছে? তবে নিশ্চয়ই কিছু কারণ আছে, নইলে চায়ের বাহানা বানিয়ে আলাদা করে ডেকে এনে এইসব বলতো না।
– অমিত, চলো, আই সেড হোয়াট আই ওয়ান্ট টু। লেটস রিটার্ন টু আওয়ার ডেস্ক।

অফিসের পরে বাড়ি ফিরে অমিত চিন্তায় পড়ে গেলো। বেইরুট সম্বন্ধে এর আগে অনেক কিছুই শুনেছে। বিশেষ করে রাতের বেইরুট সম্বন্ধে। অমিত তো একা নয়। হিমাই নাথারোভ আর সংযম শাহ তো সঙ্গেই থাকবে। তাহলে এত সাবধানবাণী কেন? যাই হোক, এর আগে অমিত অনেক অফিস ট্যুর করেছে, কোনদিন কোনো অসুবিধা বা সমস্যা হয় নি, আশা করি এবারেও হবে না। তবে বিদেশে অজানা অচেনা পরিবেশে মধু যখন সাবধান করে দিয়েছে, সেটা মনে রাখতে হবে।

পরদিন সকালের ফ্লাইটে অমিত, হিমাই নাথারোভ আর সংযম শাহ, তিনজনে বেইরুট পৌঁছে সোজা সাইট অফিসে চলে গেলো, অফিস ম্যানেজমেন্ট থেকে সেরকমই নির্দেশ ছিলো। এই বেইরুট পোর্টেও পৃথিবীর নানান দেশের অসংখ্য লোক কাজ করে। অমিত দেখে এখানে আরবদেশের লোকজনদের বাদ দিলে বাকি সকলেই একে অন্যকে নাম ধরে ডাকে। হিমাই নাথারোভ অমিতের থেকে অন্তত বছর দশ বছরের বড়। অমিত মিস্টার নাথারোভ সম্বোধন করতেই উনি হেসেই তৎক্ষণাৎ জবাব দিলেন, “হে অমিট, প্লিজ কল মি হিমাই। ডোন্ট কল মি মিস্টার।“

অফিসের ব্যাস্ততার মধ্যেই সারাটা দিন অমিতের কেটে গেলো। সেগুলো এই গল্পের বিষয় নয়। সন্ধ্যার কিছু পরে, মানে ডিনার টাইমের কিছু আগে তিনজনেই একসাথে অফিসের গাড়িতে হোটেলে যখন ফিরে গেলো, তখন দেখা গেলো দুজন লোক হিমাইএর জন্য, আর একটি ইয়ং মেয়ে সংযমের জন্য হোটেল লবিতে অপেক্ষা করছে। সেই দু’জন লোক হিমাইকে দেখেই এগিয়ে এসে হ্যল্লো হিম্মু বলে হিমাইএর দুই গালে দু’জন চুমু খেলো। এই হ্যাল্লো হিম্মু শুনে অমিত একদম নিশ্চিত যে এঁরা পুরুষ, কিন্তু ব্যাবহারে, বডি ল্যাঙ্গুয়েজে পুরো স্ত্রীলোকের মতন। আর অন্যদিকে সেই মেয়েটিও এসে সংযমকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চুমু খেলো। মিনিট খানেকের এই দৃশ্য দেখে অমিত হতভম্ব। সে বুঝতে পেরেছে, এঁরা হিমাই আর সংযমের পূর্বপরিচিত, আর এঁদেরকে আগে থেকেই খবর দেওয়া ছিলো। কিন্তু এঁরা কারা? বিশেষ করে, ঐ দু’জন যারা হিমাইকে চুমু খেলো, তাঁরা কি পুরুষ মানুষ? যতই হোক স্ত্রীলোকের মতন ব্যাবহার, আর আদব কায়দা, বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এঁরা পুরুষ মানুষ। অবশ্য যদি উভলিঙ্গ না হয়। সংযমের ব্যাপারটা অমিত আন্দাজ করতে পারছে। কিন্তু এই অদ্ভুত দুটি লোক এখানে হিমাইএর কাছে এই সন্ধ্যায় কি জন্য হোটেলে দেখা করতে এসেছে?

হোটেলে তিনজন আলাদা আলাদা চেক ইন করার পরে, অমিত জানতে চাইলো ডিনারে কখন যাবে? একথা শুনেই হিমাই বললো, “ডিনার? নো নো অমিট, আই উড টেক ডিনার ইন মাই রুম।“
একটু পরেই অমিতকে ডেকে বললো, “অমিট, উই থ্রি শ্যাল টেক ডিনার ইন মাই রুম। ইফ ইউ ওয়ান্ট ডিনার উইথ আস, ইউ ক্যান জয়েন।”
মানে এই দুই অদ্ভুত লোকের সাথে আমাকে ডিনারে বসতে হবে? অমিত মানা করে দিলো।
– নো, থ্যাংকস হিমাই, ইউ গো এহেড।
– ওক্কে, বাট ওয়ান রিকুএস্ট ফর ইউ। প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি ফ্রম নাও, টিল টুমরো মর্নিং।

এবার অমিতের খটকা লাগলো। তাঁরা তিনজনে অফিস ট্যুরে এসে একসাথে রাতের ডিনার করবে, এটাই সে আশা করেছিলো। কিন্তু এই দুজন অদ্ভুত লোক হিমাইয়ের কি এতই ব্যাক্তিগত পরিচিত যে সে অমিতের সাথে ডিনারও করবে না? আর হিমাই বারণও করছে, আজ রাতে ওঁকে যেন কোনভাবেই ডিস্টার্ব না করা হয়। তখনই মনে পড়লো, মধু ওঁকে সাবধান করে দিয়েছিলো, সে যেন অন্য কোনো রুমে না যায়, পরিচিত কেউ ডাকলেও না।

অনেককিছুই ভাবতে ভাবতে অমিত নিজের রুমে চেক ইন করলো। মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সংযমের সাথের মেয়েটি কে? আর হিমাইএর সাথের লোক দুটিই বা কারা? যদি কয়েক পেগ ড্রিংক্স নেয়, তাহলে তো অমিতকে ডাকতেই পারে। কিন্তু ড্রিংক্সের কথা তো বললো না! জুয়া খেলতে হলে হোটেলের ক্যাসিনোতে যেতে পারে। স্ট্রিপটিজ বা নাইট ক্লাবেও যেতে পারে। নাকি অন্য এমন কিছু, যা তিনজনের মধ্যে একান্তই গোপনীয়, যা হোটেলের রুমের বাইরে কেউ যেন জানতে না পারে?

এসব চিন্তা করতে করতেই অমিত ভাবলো খানিক বীয়ার পান করা যাক। ওর রুমে ফ্রিজ নেই, অর্ডার দিয়ে বীয়ার আনাতে হবে। সার্ভিসে ফোন করে বীয়ারের অর্ডার দিতেই অন্যপ্রান্ত থেকে উত্তর এলো, “স্যার, ইউ ওয়ান্ট মেল সার্ভিস? অর ফিমেল সার্ভিস?”
– আই ডোন্ট কেয়ার মেল অর ফিমেল, আই জাস্ট ওয়ান্ট এ বটল অফ বীয়ার।
– স্যার, মেল অর ফিমেল, এনিথিং?
– ইয়েস, এনিথিং। প্লিজ সেন্ড দ্যা বীয়ার।
কি হোটেল রে বাবা? রুমে বীয়ার চেয়েছি, তাঁর জন্য মেল সার্ভিস, না ফিমেল সার্ভিস?

খানিক পরেই রুমের কলিং বেল বাজলো। দরজা খুলতেই সামনে একটি স্বল্পবসনা মেয়ে, অসাধারণ সুন্দরী, অল্পবয়সী। দেখে মনে হয় ইউরোপীয়ান। হাতে বীয়ার ট্রে। সাথে একজন স্যুট পরা লোক, দেখে মনে হয় ম্যানেজার মতন কেউ।
– স্যার, হেয়ার ইজ ইয়োর বীয়ার। এন্ড সি ইজ নিকিতা, রাশিয়ান। সি ক্যান সার্ভ ইউ। বাট উই আর নট সিওর ইফ ইউ ওয়ান্ট হার সার্ভিস।
অমিতের তো ভয়ে কাপড়ে চোপড়ে হয়ে যায় আর কি? তাড়াতাড়ি বলে উঠলো, “নো, নো, আই ওয়ান্ট ওনলি বিয়ার, নট হার সার্ভিস।“
– দেন শুড আই সেন্ড এ গুড ইয়ং মেল বয়?
– ইয়ং মেল বয়? হোয়াট ফর?
– টু সার্ভ ইউ, স্যার।

এবার অমিত ধীরে ধীরে কিছু কিছু বুঝতে পারছে। হোটেলের লবিতে ঐ দুটো লোক পুরুষ না স্ত্রীলোক সেটা এক ঝলকে বোঝা মুস্কিল, কিন্তু এবার অমিত কিছু কিছু আন্দাজ করছে। আর সংযমেরও চেনা মেয়েটি, সেই বা কেন এসেছে বোঝা গেলো। হিমাইকে রাতের বেলা একটুও ডিস্টার্ব করা যাবে না। আর ঘরে বীয়ার চাইতে গেলে সার্ভিস দেবে ইয়ং মেল বয়!!!

বীয়ার শেষ করে রেস্তোরাঁয় ডিনারে যাওয়ার সময়, নিছকই কৌতুহল বশত সার্ভিস ডেস্কে গিয়ে নীচু গলায় অমিত জিজ্ঞেস করলো, “এক্সকিউজ মি, আই ওয়ান্ট ট্যু আন্ডারস্ট্যান্ড, হোয়াট ইজ ইয়োর মেল সার্ভিস?”
– ইটস সিম্পল স্যার। ইউ ক্যান হ্যাভ ফর ফিউ আওয়ারস, অর ফর দ্যা হোল নাইট। ইউ হ্যাভ চয়েস ফর ওয়ান ম্যান, অর টু থ্রি ম্যান এট এনি টাইম। উই হ্যাভ সফট ম্যান, উই হ্যাভ স্ট্রং ম্যান। উই হ্যাভ আরব, উই হ্যাভ চাইনিজ, উই হ্যাভ ইউরোপীয়ান। ইউ হ্যাভ সো মেনি চয়েস, স্যার।
এবার অমিত খানিকটা বুঝতে পারছে। আর সার্ভিস ডেস্কের লোকটি ভাবলো একজন খদ্দের পাওয়া গেলো।
– হোয়াট এজ ইউ ওয়ান্ট স্যার? বাট ইট শ্যুড বি মিনিমাম টুয়েন্টি, দ্যাটস দ্যা ল’। এন্ড স্যার, ইফ ইউ ওয়ান্ট, উই ক্যান অফার ওল্ড ম্যান অলসো।
– ওল্ড ম্যান?
– ইয়েস স্যার। ইউ ক্যান গেট ওল্ড ম্যান অফ সিক্সটি, সেভেনটি।

এতক্ষনে অমিতের কাছে হিমাইএর কেসটা পরিস্কার হলো। ভাবা যায়? হিমাই দু দু’টো লোকের সাথে সারা রাত এইসব করবে? আরও ব্যাপারটা জলের মতন পরিস্কার হয়ে গেলো, কেন মিস মধু পালোতে আলাদা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে আগেই অমিতকে সাবধান করে দিয়েছিলো।

ডিনারের পর এইসব ভাবতে ভাবতেই অমিত ঘুমিয়ে পড়েছিলো। পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট খেয়ে অমিত বাকি দুজনের জন্য হোটেল লবিতে অপেক্ষা করছে। অফিসের গাড়ি এসে গেছে, অথচ হিমাই আর সংযম আসছে না। ব্রেকফাস্ট টেবিলেও ওঁদের দুজনের কাউকেই দেখা যায় নি। রিসেপশনে গিয়ে হিমাই আর সংযমের রুম নম্বরে ফোন করতে চাইলে, মেয়েটি কম্পিউটার দেখে জানালো, এই দুই নামের কোন গেস্টই এখানে নেই। আশ্চর্য! গতকাল তো এখানেই চেক ইন করে হিমাই ঐ লোক দুটোকে আর সংযম মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে অমিতের চোখের সামনেই লিফটে গিয়ে উঠলো!! আরও আশ্চর্য অপেক্ষা করছিলো অমিতের জন্য। মেয়েটি প্রশ্ন করলো, “স্যার, আর ইউ মিস্টার অমিট?”
– ইয়েস, আই এম।
– স্যার, দেয়ার ইজ এ মেসেজ ফর ইউ। প্লিজ ডোন্ট ওয়েট ফর ইয়োর কলীগস। ইউ মে প্লিজ গো টু ইয়োর অফিস। ইয়োর কলীগস উড জয়েন ইউ ইন দ্যা অফিস।

এরপর আর অপেক্ষা করা যায় না। অমিত গাড়ি নিয়ে সাইটে চলে গেলো। একটু পরেই হিমাই আর সংযমও একসাথেই সাইটে এলো। অমিত সংযমকে বললো, “আই ওয়াজ সার্চিং ফর ইউ সংযম। হোয়ার ওয়ার ইউ?”
প্রশ্নটা হিমাই শুনতে পেয়েছিলো। অমিতকে একটু সাইডে নিয়ে গিয়ে খুব ঠান্ডা মাথায় বললো, “অমিট, উই আর হেয়ার অন এ বিজনেস ট্রিপ। উই হ্যাভ বিজনেস ডিউরিং দ্যা অফিস টাইমস। আফটার দ্যাট, আই মীন আফটার দ্যা ইভনিং ইটস মাই পার্সোনাল টাইম। সো, মাই রিকুয়েস্ট, প্লিজ ডোন্ট ব্রেক ইয়োর হেড ইন ইনভেস্টিগেশন। ওকে?”
এরপর অমিতের কাঁধে হাত দিয়ে খুবই ঠান্ডা মাথায় বললো, “নাউ অমিত, ইটস আওয়ার অফিস টাইম, সো লেটস অল গো ফর দ্যা বিজনেস।“

অফিসে সারাদিন স্বাভাবিকভাবেই কাজের মধ্যে দিয়ে কেটে গেলো। এরপর হোটেলে গিয়ে সেই গতকালের একই দৃশ্য। সেই মেয়েটি আর লোক দুটি লবিতে অপেক্ষা করছে। হিমাই আর সংযম ওঁদের নিয়ে লিফটে উঠে গেলো। এরপর কি হবে, কোন রুমে যাবে, বা আদৌ এই হোটেলে রাত কাটাবে কিনা, সেটা রহস্যই থেকে যাবে।

তিনদিন পরে সকলেই আবু ধাবি ফিরে এলো। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা অফিসে। নিজের ডেস্কে আসতেই মধু এগিয়ে এলো, “ওয়েলকাম ব্যাক অমিত। ইউ ওয়ান্ট এ কাপ অফ টি, অর কফি?”
অমিত বুঝলো, এই ডিজাইন হলে আরও অনেকের মাঝে মধু কথা বলতে চায় না, তাই একান্তে অফিস কাফেতে নিয়ে যেতে চাইছে।

একটা ব্যাপার, মধু কিন্তু কিছুই বলছে না। শুধু মুচকি মুচকি হাসছে। বোধহয় চাইছে, অমিতই আগে কিছু বলুক।
কফিতে এক চুমুক দিয়ে অমিত বললো, “থ্যাংকস মধু,ফর ইয়োর এডভাইস, এন্ড কশন।”
মধু কিছুই বললো না, শুধু শেক হ্যান্ডের জন্য হাতটা বাড়িয়ে দিলো।

********

গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো, কিন্তু এক লাইন না লিখলে অসমাপ্ত থেকে যায়। ছয়মাসও গেলো না। অমিত আর মধুমিতা পালোতে এখন একসুত্রে গাঁথা।

Asim Deb

Add comment